আঁধারে বাঁশি বাজে
-প্রলয় কুমার নাথ
(১)
দুপুরের দিকে কেমন যেন ঝিমুনি ভাব চলে আসে গৈরিকের। রাসবিহারী মোড়ের একটি বহুতল বাড়ির তিন তলায় তার ছোট্ট অফিসে বসে গৈরিকের মনে হলো, আজ আর কোনো ক্লায়েন্ট আসবেনা বোধহয়, তাই বাড়ি গিয়ে কিছুক্ষণ ভাত ঘুম দিয়ে নিই। তার অফিসে একমাত্র কর্মচারী রঘুবীর, ওরফে রঘুদাকে সবকিছু বন্ধ করে দিতে বলে ড্রয়ার থেকে বাইকের চাবিটা বার করতে যাবে, এমন সময় হঠাৎ বেজে উঠলো ল্যান্ডফোন। রিসিভার তুলে ওপার থেকে একজন পুরুষ কণ্ঠ বলে উঠলো,
-“হ্যালো, এটা কি ‘সেন’স আই’ ডিটেকটিভ এজেন্সি?”
–“হ্যাঁ, বলছি!”
–“আমি কি মিস্টার গৈরিক সেনের সাথে কথা বলছি?”
–“ওফ কোর্স…”
–“নমস্কার মিস্টার সেন, আমি অরুণাভ…মানে অরুণাভ রায়চৌধুরী…মানে আপনি আমাকে ঠিক চিনবেন না…মানে আপনার অফিসের নাম্বারটা আমি নেট থেকে…”
এরপর কিছুক্ষণ স্তব্ধ হলো কণ্ঠ, কয়েকবার ঢোক গেলার আওয়াজ পেলো গৈরিক। বোঝা যাচ্ছে ওপারে যে আছে, সে খুব একটা সুখে নেই।
গৈরিকই ফের কথা শুরু করলো,
-“হ্যাঁ, তো অরুণাভ বাবু, বলুন আমি আপনার জন্য কি করতে পারি?”
-“আসলে…মানে…আ…আমি একটু আপনার সাথে দেখা করতে চাই? আপনি কি এখন আপনার অফিসে আছেন?”
কি ভেবে গৈরিক বলল,
-“হ্যাঁ, আছি, চলে আসুন, আমার অফিসের ঠিকানা নেট থেকে দেখে নিয়েছেন তো, নাকি বলে দিতে হবে?”
মোটামুটি ঘন্টা খানেক পর গৈরিক যার সাথে তার “সেন’স আই” অফিসে বসে কথা বলছিল, সে বেশ লম্বা চওড়া সুপুরুষ যুবক, নাম অরুণাভ রায়চৌধুরী, বয়স আন্দাজ পঁয়ত্রিশ। তবে তার কথা বলার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে যেন বেশ মানসিক চাপের মধ্যে আছে। সবে কথা বলা শুরু হয়েছিল, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো টুসু।
– “কিগো গেরোদা, হঠাৎ ফোন করে আসতে বললে, কি ব্যাপার?”
টুসু হলো গৈরিকের কাকার মেয়ে, ভালো নাম ঐন্দ্রিলা সেন। তাকে দেখে ওপর আগন্তুক একটু ইতস্তত করলে, গৈরিক বলল,
-“আপনি নিঃসন্দেহে ওর সামনে সব কথা খুলে বলতে পারেন মি: রায়চৌধুরী, ও আমার কাকাতো বোন ঐন্দ্রিলা। আমার ওয়ান এন্ড ওনলি এসিস্ট্যান্ট।”
অরুণাভ বোধহয় একটু স্বস্তি পেলো এই কথা শুনে। সত্যি তো, টুসু আর তার গেরোদা মিলে শহরের কত বড়ো বড়ো রহস্যই না সলভ করেছে, তার কি কোনো ইয়ত্তা আছে?
অরুনাভ বলতে শুরু করলো,
-“আমার পূর্বপুরুষের ভিটে বীরভূম জেলার বালিজুরী গ্রামে। ওখানকার জমিদার ছিলাম আমরা এক কালে, তবে এখন ওই পোড়ো ভিটেটা ছাড়া আর কিছু নেই, থাকার কথাও নয় এই ২০১৯ সালে। তবে আমি পর্ণশ্রীতে একটি বাড়িতে ভাড়া করে থাকি মার সাথে, বাবা গত হয়েছে প্রায় তিন বছর। তারাতলার একটি কোম্পানিতে কাজ করছি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। যাইহোক, আসল কথায় আসি। আসলে আমাদের গ্রামের বাড়ির সাথে একটা পুরোনো ঘটনা জড়িয়ে আছে…যা…যা কিনা…”
একটু দম নিয়ে নিল অরুণাভ। এমনি সময় কফির ট্রে হাতে হাজির হলো রঘুদা। টুসু সবাইকে কফি অফার করে বললো,
-“হ্যাঁ, তো কোন ঘটনার কথা বলছিলেন আপনি?”
অরুণাভ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল,
-“সে প্রায় দেড়শ বছর আগের কথা, তখন আমাদের এক পূর্বপুরুষ নরনারায়ান রায়চৌধুরী দোর্দন্ড প্রতাপে সারা জমিদারী কাঁপিয়ে বেড়াতেন। সেই সময় হঠাৎ ওই গ্রামে আগমন হলো এক জটাধারী সন্ন্যাসীর, জমিদার বাড়ির পেছনে যে জঙ্গলটা আছে, সেখানেই সবাই দেখেছিল তাকে। তবে সেই সন্ন্যাসীর চেহারা ছিল একবারে নায়কের মতো, আর তার আর একটা গুণও ছিল। রাত হলেই একটা মিষ্টি বাঁশির সুর শুনতে পেত গোটা গ্রাম, বলা বাহুল্য সেটা ওই জঙ্গলে বসে বাজাত ওই সন্ন্যাসী!”
গৈরিক বলল,
-“স্ট্রেঞ্জ, সন্ন্যাসী বাঁশি বাজাত?”
-“আজ্ঞে হ্যাঁ, সে সুর গোটা গ্রামের সবাই শুনেছে।”
টুসু বলল,
-“ঠিক আছে, সে না হয় বুঝলাম, তারপর কি হলো?”
-“হয়তো ওই সন্ন্যাসীর চেহারা দেখে বা তার বাঁশির আওয়াজ শুনেই তার প্রেমে পড়ল আমাদের পরিবারেরই এক মেয়ে, শিউলি। সে প্রায় রোজ রাতে দেখা করতে যেত তার সাথে, পরে সবাই বলাবলি করতো রোজ রাত্রের ওই বাঁশির সুরই হলো সন্ন্যাসীর তরফ থেকে শিউলিকে কাছে ডাকার ইঙ্গিত। এদিকে শিউলি ছিল বালবিধবা, তার এই আচরণে যে পরিবারের মুখে চুনকালি লাগছে, তা কেউ না বললেও চলবে!”
টুসুর বেশ কৌতূহল হচ্ছিল গল্পটা শুনে, সে বলল,
–“তা ওই, কি যেন বললেন, নরনারায়ান রায়চৌধুরী…তিনি কি কখনো জানতে পেরেছিলেন শিউলির এই প্রেম কাহিনী?”
–“পারবে না, আলবাত পেরেছিল, আর সেটাই কাল হয়ে গেল আমাদের সকলের জন্য…কিছুদিন পরে ওই জঙ্গলেই সন্ন্যাসীর লাশ পাওয়া গেলো, পিটিয়ে খুন। সবাই বুঝলো এটা জমিদারের লেঠেলদের ছাড়া আর কারো কাজ নয়, আর তার দু’দিন পর গ্রামের পুকুরে পাওয়া গেলো শিউলির গলায় কলসি বাঁধা মৃতদেহ। আত্মহত্যা করেছিল সে। কিন্তু তারপর থেকে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকলো গ্রামে…কোনো কোনো দিন রাত্রে ওই একই বাঁশির সুর ভেসে আসতে থাকল জঙ্গল থেকে। আর তেমনি এক রাত্রে হৃদরোগে মৃত্যু হল নরনারায়ানের। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল গ্রামে নাকি ওই সন্ন্যাসীর ভূতের আবির্ভাব হয়েছে! তারপর কত ওঝা তান্ত্রিক, ঝাড়-ফুঁক…”
এবার গৈরিক বলল,
-“তা এ তো অনেক আগেকার গল্প, এটা নিয়ে এখন কি বিপত্তি হলো আপনার?”
অরুণাভ কফিতে শেষ চুমুম দিয়ে বলল,
-“বলছি, সেটা বলার জন্যই তো এসেছি মি: সেন। আসলে আমাদের গ্রামের বাড়িটা ফাঁকাই পড়ে থাকতো, ওখানে লোক বলতে শুধু একজন বয়স্ক কেয়ারটেকার আর তার পরিবার থাকে। আমাদের খুব পুরোনো লোক। তবে কিছুদিন ধরে ওখানে একটি মেয়ে ভাড়া থাকছিলো, নাম জাহ্নবী…জাহ্নবী গোস্বামী। আমাদের গ্রামের উচ্চমাধ্যমিক স্কুলটিতে টিচার হয়ে এসেছিল।”
একটু থতমত খেয়ে চুপ করে গেল অরুণাভ।
গৈরিক ওর দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
-“কি হলো থামলেন কেন?”
-“কিছুদিন ধরেই গ্রামের লোকেরা আমাদের খবর দিয়েছিল যে ওই বাঁশির শব্দ নাকি আবার পাওয়া যাচ্ছে মাঝরাতে…আর…আর…”
-“আর?”
অরুণাভ আবার একবার ঢোক গিলে বলল,
-“তিন দিন আগের ঘটনা…জাহ্নবীর লাশ পাওয়া গেছে ওই জঙ্গলে!”
চোখ বন্ধ করে কপালে হাত রাখল অরুণাভ। উত্তেজনায় টুসু বলে উঠল, “সে কী !”
(২)
অরুণাভ কিছুক্ষণ চুপ করেছিলো, তারপর বলল,
-“খুবই প্যাথেটিক কেস বুঝলেন গৈরিক বাবু!”
গৈরিক এতক্ষণ চুপ করে সবকিছু শুনছিলো, বলল,
-“কিভাবে হলো খুনটা?”
-“পুলিশ যা বলেছে তা হলো মাথায় কোনো ভারী বস্তু যেমন ইট বা পাথর…”
-“বুঝলাম, তা আপনি পুলিশকে তো খবর দিয়েছেন, তবে আমার কাছে আসলেন কেন?”
-“পুলিশের ওপর আমার খুব একটা ভরসা নেই, তা নয়, কিন্তু তারা যা বলছে আমি তা মেনে নিতে পারছি না…”
-“কি বলছে তারা?”
-“আসলে আমাদের গ্রামে মাঝে মাঝেই একটা পাগল লোক ঘুরে বেড়ায়, গায়ে কালি ঝুলি মাখা, শতছিদ্র পোশাক পরা, দাড়ি গোঁফে ভরা মুখের এই লোকটা সবসময় কি যেন আবোল তাবোল বলতে থাকে, গ্রামবাসীরা ওর কাছে এলে গালাগালি দেয়, ঢিল ছুঁড়ে পালিয়ে যায়…”
কথা শেষ না করেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো অরুণাভ। অগত্যা গৈরিকই বলে উঠলো,
-“আর পুলিশ বলছে নিশ্চয়ই এটা তার কাজ, তাই তো?”
-“আজ্ঞে হ্যাঁ, কিন্তু কি জানেন, আর যাই হোক ও মানুষ খুন করবে বলে আমার মনে হয়না, তবে জাহ্নবীর খুনের পর তাকে আর কেউ দেখেনি ধারে কাছে!”
-“তাতেই হয়তো পুলিশের সন্দেহ দানা বেঁধেছে ওর প্রতি, যাই হোক, আপনার কি অন্য কারোর প্রতি কোনো সন্দেহ হয়?”
-“হ্যাঁ, সেই রকম আছে একজন, তবে…”
-“আপনি নিঃসঙ্কোচে সব কিছু বলতে পারেন, কেউ কিছু জানবে না।”
-“আমি খুব একটা সিওর নই, তবে এর পেছনে শ্যামসুন্দর ঝাঁর হাত থাকলেও থাকতে পারে। উনি আমাদের ওখানকার বড় প্রমোটার, আমাদের বেশ কিছু টাকা অফার করেছিল সে ওই বাড়িটা কেনার জন্য। তবে আমরা রাজি হয়নি…আসলে কি বলুন তো, পৈতৃক ভিটে তো, তাই কেমন একটা মায়া পড়ে গেছে…”
অরুণাভ আরো কয়েকটা খুঁটিনাটি কথা বলে চলে গেল, যাওয়ার আগে অনেকবার করে গৈরিককে অনুরোধ করলো কেসটা নিতে। গৈরিক বলল, ভেবে দেখবে।
“ভেবে দেখবো” কথাটা শুনে টুসুর একটু রাগই হলো গেরদার প্রতি। তার তো বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে কেসটাকে, গেরদার না একটু বেশি বেশি। তবে সেই রাগ আর বেশিদিন থাকলো না, কারণ পরের দিনই তার গেরোদা তাকে ফোনে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোর কলেজের চাপ কেমন রে এখন, কয়েকদিন কামাই হলে কি খুব একটা প্রবলেম হবে?”
-“না তা নয়, তবে কামাই করে যাবোটা কোথায়?”
-“বীরভূমে, বালিজুরী গ্রামে…”
গেরোদা আরো কত কিছু বলছিল কিন্তু টুসুর কানে সেই সব ঢুকলে তো! সে তো ওখানে যাওয়ার কথা শুনেই আনন্দে উত্তেজনায় আত্যহারা।
অরুনাভাদের বাড়িটা বিশাল বড়, আগেকার আমলে তৈরি। বড় বড় থাম, বিশাল উঁচু গেট, ঠাকুর দালান এবং বেশ বড় উঠোনের চারিপাশে দোতলা বাড়ির চওড়া বারান্দা। তবে দেখেই বোঝা যায়, আগেকার সেই শোভা আর নেই। বেশিরভাগ অংশেই চোখে পড়ে চরম দেখাশোনার অভাব। গৈরিকদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে বাড়ির দোতলায়, পুব দিকের একটা ঘরে। অরুণাভ অফিসের কি একটা কাজে আটকে গেছে তাই আসতে পারেনি, তবে ওদের আসার সমস্ত ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছিল। বাড়ির কেয়ারটেকার শঙ্করদা খুব ভালো মানুষ। প্রায় আশি বছর বয়সী এই মানুষটার পরিবারে আছে শুধুমাত্র তার ছেলে মহাদেব। মহাদেবের বয়স প্রায় সাতাশ বছর, স্বাস্থ্য ভালো, তবে কোনো রোজগারপাতি করে বলে তো মনে হয় না।
সেদিন বিকালের দিকে গৈরিকরা বাড়ির পেছনে সেই জঙ্গলটা দেখতে গিয়েছিল। সাথে এসেছিল মহাদেব। বেশ ঘন জঙ্গল, মাঝে সরু একটা আঁকা বাঁকা পথ। অনেকটা হাঁটার পর তারা পৌঁছলো একটা ভাঙা শিব মন্দিরে। একেবারে ধ্বংসাবশেষে পরিণত এই মন্দিরটি যে এককালে খুব সুন্দর ছিল তা এখনো বোঝা যায় সেটার কোন কোনো জায়গার পোড়ামাটির কারুকাজ দেখে। মহাদেব বলল,
-“এখানেই সেই সন্ন্যাসী বসে ধ্যান করতো!”
গৈরিক চারপাশটা ভালো করে দেখতে থাকলো, টুসু বলল,
-“আর বাঁশির শব্দও বুঝি এখান থেকেই আসতো? আর ওই শিউলির বুঝি এখানেই…”
কথা শেষ না হতেই গৈরিক তাকে চোখের ইশারায় চুপ করতে বলল। পেছনে একটা ঘন বনতুলসী ঝোপের পেছনে কেমন যেন একটা খস খস আওয়াজ হচ্ছে!
হঠাৎ মহাদেব সেদিকে ছুটে গেল আর ছেঁড়া জামার কলার ধরে হিরহির করে টেনে অনলো এমন একজনকে, যে কিনা এই হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত। মহাদেব চিৎকার করে পাগলটার মুখে একটা ঘুসি লাগাতে যায় আর কি, টুসু আর গৈরিক তাকে কোনক্রমে থামালো। পাগলটা চিৎকার করতে থাকলো,
-“পারবি না…পারবি না…তোরা কোনোদিন পারবি নয়…কোনোদিন গুপ্তধন খুঁজে পাবি না…পাবি না!”
গৈরিক অবাক হয়ে বলে উঠলো,
-“বাবা, আবার গুপ্তধন এলো কোথা থেকে এর মধ্যে?”
মহাদেব পাগলটার দিকে মারমুখী হয়ে বলল,
-“চোপ শালা পাগলা…শালা সবসময় ভুলভাল কথা মুখে, ওই মাস্টারনীকে খুন করে এখন বড় বড় কথা…তোকে পুলিশ খুঁজছে না? চল শালা, চল পুলিশের কাছে…”
মহাদেব আবার তেড়ে মারতে গেল পাগলটাকে।
এবার গৈরিক শক্ত করে ধরে ফেলল মহাদেবের হাত, তারপর তাকে বললো,
-“ওকে ছেড়ে দাও, আমার ওকে কিছু জিজ্ঞাস করার আছে।
কিন্তু পাগলটা ছাড়া পেয়ে আর দাঁড়ালো না, পড়িমরি করে দূরে জঙ্গলের মধ্যে অদ্দৃশ্য হয়ে গেল।
মহাদেব গৈরিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলল,
-“ওকে আপনি ছেড়ে দিলেন, ও তো খুনি, ওকে পুলিশ…”
গৈরিক তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-“কে খুনি আর কে খুনি নয়, তা শুধু বলবে সময়!”
সেদিন রাতটা মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট হয়েই কাটলো। সকালে হঠাৎ পুলিশের গাড়ির আওয়াজ শুনে টুসুর ঘুম ভেঙে গেল। তাড়াতাড়ি ঘরের বাইরে গিয়ে দেখল তার গেরোদা আগেই নীচে দাঁড়িয়ে কথা বলছে পুলিশের সাথে। দর্শনধারী চেহারার পুলিশ অফিসারটি বলছে,
-“এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেল মশাই, খুনিই শেষ পর্যন্ত খুন!”
আশ্চর্য হয়ে টুসু পেছন থেকে সটান জিজ্ঞাসা করে বসল,
-“আবার কে খুন হলো গেরোদা?”
গৈরিক উদাস মুখে আকাশের দিকে চেয়ে বলল,
-“কাল রাতে ওই পাগলটা খুন হয়েছে…পুলিশ বলছে ইটস এ কেস অফ স্ট্র্যাংগুলেশন!”
সর্বনাশ, একি বলছে গেরোদা, আবার আর একটা খুন!…টুসু ভাবলো, কেসটা যেন গেরোদার হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ!
(৩)
গৈরিক এবার ওই পাগলের প্রসঙ্গে না গিয়ে অন্য কথা বলল,
-“আচ্ছা, এই যে রাত্রে ওই বাঁশির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, এটা কতদিন আগে থেকে শুরু হয়েছে?”
পুলিশ অফিসার তার পুরুষ্ঠ গোঁফে একবার আঙ্গুল বুলিয়ে বলল,
-“তাও প্রায় তিন-চার মাস আগে থেকে।”
-“আপনারা কি এ বিষয়ে কোনো খোঁজ খবর নিয়েছিলেন?”
-“না, তেমন কিছু নয়, আসলে বুঝতেই পারছেন, গ্রামের লোকের ধারণা যে ওটা ওই সন্ন্যাসীর অশরীরি আত্মা করছে…তা ভূতের এগেনস্টে আর কেই বা থানায় কমপ্লেন করতে আসবে বলুন?”
-“বাহ, আর আপনারাও ওই ভূতের গল্পে বিশ্বাস করে নিলেন?”
-“না ঠিক তা নয়, তবে ওই জাহ্নবী ম্যাডামের আগে তো আর কোনো খুন খারাপি হয় নি…তাই আর খামোকা…”
-“তা এখন তো আর ওই পাগলকে খুনির তকমা দেয়া যাবে না সাহেব, এবার কেসটা কিভাবে সাজাবেন ভাবছেন?”
পুলিশ অফিসারটি দাঁত বার করে হেসে বলল,
-“সেই তো, এখন তো মাথায় যে আর কিছু আসছে না।”
গৈরিক একটি মৃদু হেসে বললেন,
-“মি: রায়চৌধুরীর কাছ থেকে শুনেছিলাম জাহ্নবী ওর স্কুলের চাকরিটা নিয়ে এখানে এসেছিল প্রায় পাঁচ-ছ মাস আগে, তাহলে বুঝছেন তো ওর আসার এক মাসের মধ্যেই ওই বংশীধারী ভূতের মর্তে আগমন…এবার মাথায় আসলো কিছু?”
পুলিশ অফিসারটি হাঁ করে চেয়ে রইলো গৈরিকের দিকে, ফের গৈরিকই আবার বলল,
-“আমার কার্ডটা রাখুন, জাহ্নবীর পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টটা এলে জানাবেন, এখন একটু কাজ আছে, চলি।”
পুলিশের গাড়িটা চলে যাওয়ার পর গৈরিক আর টুসু বাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়েও থেমে গেলো, দেখলো আরেকটা নীল ইটিওস ওদের দিকেই ধুলো উড়িয়ে আসছে। কাছে আসতেই গাড়ি থেকে নামলেন ছাই রঙের সাফারি সুট আর নানা রকমের সোনার গহনা পড়া এক গাট্টা-গোট্টা ভদ্রলোক। সে নিজেই কথা বলা শুরু করল,
-“হামার আদমিলোগ সহি খবর দিয়েছিল…উ রায়চৌধুরী কা লউন্ডা ডিটেক্টিভ হায়ার করেছে…”
বলে নিজেই হো হো করে হাসতে লাগল।
গৈরিক কঠোর স্বরে বলল,
-“ভালোই হলো আপনি নিজেই এখানে এলেন, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল মিস্টার শ্যামসুন্দর ঝাঁ, কি নামটা ঠিক বললাম তো?”
-“হাঁ, বহুত খুব বহুত খুব, অভি দেখিয়ে না, হামি ইতনা সারা রূপিয়া অফার করলাম মিস্টার রায়চৌধুরীকে এই বাড়িটার জন্য, লেকিন ও…”
শ্যামসুন্দরকে থামিয়ে দিয়ে গৈরিক বলল,
-“কেন কিনতে চান এই পোড়ো বাড়িটাকে আপনি?”
-“হামি ইখানে ফাইভ ইস্টার হোটেল বানাবো, কাছে বহ জঙ্গল আছে না, তারপর নদী আছে, মন্দির আছে, ইখানে হামি ট্যুরিস্ট-স্পট বানাতে চাই!”
-“তার মানে এখানে যদি কারোর খুন হয় বা ভূতের বাঁশি শোনা যায়, তাহলে তো আপনার ভালোই হয় তাইনা, অরুনাভ বেশ ভয়ে ভয়ে আপনাকে বাড়ি বিক্রি করে পালাবে!”
এইবার শ্যামসুন্দর রক্তচক্ষু বার করে স্পষ্ট বাংলায় বলল,
-“কি বলতে চান কি আপনি? এই সব আমি করছি? শুনুন মিস্টার ডিটেক্টিভ, ভালো চান তো এখুনি কেটে পড়ুন এখান থেকে নাহলে…”
এতক্ষণ টুসু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে যাচ্ছিল, হঠাৎ চিৎকার করে বলল,
-“নাহলে….নাহলে কি করবেন আপনি? দেশে কি থানা পুলিশ নেই, এভাবে ওপেনলি থ্রেট করছেন?”
-“আরে ওই থানা আর পুলিশ আমার দু’ হাতের মুঠোয় বুঝলে দিদিমণি, তাই আমার লেজে পা দিতে এসো না, ফল ভালো হবে না।”
টুসু ব্যঙ্গের সুরে বলল,
-“রামায়নে তো পড়েছি হনুমান লেজে আগুন লাগিয়ে গোটা লঙ্কা জ্বালিয়ে ছিল, তবে তা তো অনেক কঠিন কাজ…আমি ভাবছি আপনি কি লেজ দিয়ে ওই বাঁশীটা ধরে বাজাতে পারবেন?”
-“কেয়া? আগার বানসি বাজানা হোতা তো হাত সে হি পাকারতা না…”
-“কিন্তু সেটা কি করে হতো? ওই যে বললেন না আপনার এক হাতের মুঠোয় থানা আর অন্য হাতের মুঠোয় পুলিশ, বাঁশি ধরার আর জায়গা কোথায় থাকলো?”
এবার গৈরিকও আর হাসি চেপে রাখতে পারল না।
একটু দুপুর গড়াতেই অরুণাভ এসে হাজির। স্নান সেরে একসাথে খেতে বসল সবাই। আজ বোধহয় সে এসেছে বলেই দুপুরের মেনুতে স্পেশাল কিছু খাবার তৈরি হয়েছে এই বাড়িতে…চিংড়ি মাছ দিয়ে এঁচোর, ঝুরি আলুভাজা, কষা মটন, মুগডাল আর আমসত্বের চাটনি। খেতে খেতেই অরুণাভ বলল,
-“কিছু মনে করবেন না মিস্টার সেন, আসলে অফিসে একটা মস্ত বড় অডিট চলছিল তাই আপনাদের সঙ্গে একসাথে আসা হলো না।”
গৈরিক একটা এঁচোরের টুকরো মুখে পুরে বলল,
–“না না ঠিক আছে, কোনো অসুবিধা হয়নি আমাদের, আচ্ছা একটা কথা বলুন…এই যে মহিলা ভাড়া থাকতো আপনার বাড়িতে, তার ব্যাকগ্রাউন্ড কিছু চেক করেছিলেন আপনি?”
-“হ্যাঁ, যা জেনেছিলাম তা হলো ও আমাদের গ্রামের স্কুলটিতে অর্থনীতির টিচার হয়ে এসেছিল, আমি স্কুলেও খোঁজ নিয়েছিলাম। বিয়ে-থা তো করেনি। বয়স ছিল ওই পঁচিশ চব্বিশ মতো।”
-“আর বাড়ির ঠিকানা বা আত্মীয় পরিজন?”
-“ওর বাড়িটা কোথায় যেন…দাঁড়ান মনে করে দেখি…ও হ্যাঁ…বার্ধমানের গুস্কারায়…ঠিকানাটা আছে আমার কাছে।”
-“গুড, আমি কালকেই ওখান থেকে একবার ঘুরে আসতে চাই!”
দুপুরের ওই ভাত ঘুমের নেশাটা বোধহয় আর যাবে না গৈরিকের। সবে মাত্র একটু তন্দ্রা এসেছে এমন সময় বেজে উঠলো মোবাইল।
-“হ্যালো…”
-“হ্যাঁ বলছি…”
-“দ্যাটস গুড, তা কি বেরোলো রিপোর্টে?”
-“আচ্ছা, বুঝলাম।”
টুসু দেখলো একটা গভীর কালো মেঘ যেন গ্রাস করছে তার গেরোদার পুরো মুখমন্ডল। আর না থাকতে পেরে সে জিজ্ঞেস করলো,
-“কি গো? কে ফোন করেছিল? কি বললো?”
বেশ উদ্বেগ মেশানো স্বরে গৈরিক বললো,
-“থানা থেকে ফোনে করেছিল রে, ওরা জাহ্নবীর পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টটা পেয়েছে, একটা পাথর খুব কাছ থেকে তার মাথায় আছড়ে মারা হয়েছে…স্কাল্প ভেঙে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু…আরেকটা খবরও দিলো পুলিশ…ওই রক্ত মাখানো পাথরের টুকরোটাও খুঁজে পেয়েছে ওরা!”
-“বাহ, এত খুব ভালো কথা, এমনটাই তো আমরা এক্সপেক্ট করেছিলাম।”
-“কিন্তু যেটা এক্সপেক্ট করিনি সেটা হল মৃত্যুর সময় জাহ্নবী ছিল দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা!”
এই কথাটা শুনেই চমকে উঠলো টুসু…এ কি ভাবে সম্ভব? অরুণাভ তো বলল যে জাহ্নবী বিয়েই করেনি, তাহলে সে অন্তঃসত্ত্বা হলো কিভাবে…এ কথা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলো না টুসু।
সত্যি, কেসটা কোন দিকে ঘুরছে তা কেই বা জানে!
(৪)
যদিও বা এখন শীতকাল নয়, তবুও মাঝরাতে জঙ্গলের আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে যেতে যেতে বেশ একটা শিহরণ লাগছিলো টুসুর। যত তারা ওই পোড়ো মন্দিরটার দিকে এগোচ্ছে, বাঁশির সুরটা তত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। টুসু ভাবলো, গেরোদা সবকিছু আগে থেকে কিভাবে বুঝে যায় কে জানে, কারণ সন্ধ্যে হলেই সে তাকে বলেছিল,
-“আজ কিন্তু হাঁ করে ঘুমিয়ে পরিসনা, বুঝলি, মনে হচ্ছে আজ ওই বংশীধারীর খোঁজে রাতে হয়তো আমাদের বেরোতে হতে পারে।”
না, ঘুমিয়ে টুসু একেবারেই পড়েনি, বরং অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল যে মাঝরাতে ওই মধুর বাঁশির ধ্বনি পাওয়া যায় কিনা। এবং সঠিক সময়ে তা তাদের কানে পৌঁছেও গেছিল, তাই এখন তারা বেরিয়েছে এই নৈশ অভিযানে।
এখন দূর থেকে মন্দিরটা দেখা যাচ্ছে…চারিদিকের ঘন অন্ধকারে ভরা বোনঝোপের মাঝে যেন ছোট্ট একটা দৈত্যপুরী, দাঁত বের করে আছে তাদের গিলবে বলে। টুসু ভূতে বিশ্বাস করে না, কিন্তু তবু যেন আজ ওর গা ছমছম করতে লাগলো। কে আছে ওর ভেতরে যে এত রাতে বাঁশি বাজাচ্ছে? কে ! গৈরিক ফিসফিস করে বলল,
-“শোন, আমরা মন্দিরের পেছনে গিয়ে দাঁড়াব, ওখানে একটা ছোট জানলা আছে, ওখান দিয়েই দেখা যাবে ভেতরে কে আছে। আর কোনো শব্দ করবি না বুঝলি?”
ওরা ঠিক জায়গায় পা টিপে টিপে এসে দাঁড়িয়ে যখন চোখ রাখলো মন্দিরের ভেতরে, তখন টুসুর মনে হচ্ছিল যেন ওর হৃৎপিন্ডটা বোধহয় এইবেলা বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে। গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে ওরা দেখলো তাদের দিকে পেছন ফিরে শিবলিঙ্গের পাশে বসে আসে একটা পুরুষের মূর্তি, বেশ স্বাস্থ্যবান চেহারা, মাথায় এবং কাঁধে চাদর জড়ানো। লোকটি একমনে একটা বাঁশি নিয়ে বাজিয়ে চলেছে।
হঠাৎ টুসু “মাগো…” বলে চিৎকার করে উঠতেই গৈরিক দেখলো ওর পাশ দিয়ে কি যেন একটা কিলবিল করতে করতে মন্দিরের একটা ফাটলে অদৃশ্য হয়ে গেল। একটু পরেই টুসু হুঁশ ফিরে পেয়ে বলল, –“কিছু হয়নি আমার…কামড়ায়নি”।
কিন্তু এতক্ষণে বাঁশি বাদক সতর্ক হয়ে উঠেছে, সে কোনো রকমে চাদরটা আরো টাইট করে মুখে জড়িয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল মন্দির থেকে। গৈরিক ছুটে গিয়ে ওর কাঁধটা ধরতেই ও ঘুরে গিয়ে জোরে একটা ঘুষি মারলো গৈরিকের মুখে। গৈরিককে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে টুসু ক্ষিপ্ত বেগে ছুটে গেল লোকটির কাছে, খামচে টেনে ধরলো তার বুকের চাদর। কিন্তু লোকটার গায়ে যেন অসুরের বল, সে এক ধাক্কায় টুসুকে দূরে ঠেলে দিয়ে দৌড়ে মিশে গেল দূরের গাছপালার মাঝে অন্ধকারে।
কিছুক্ষণ পর গৈরিক টুসুর কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“কি রে ঠিক আছিস তো?”
টুসু এখনো লোকটার প্রতি রাগে আর উত্তেজনায় একেবারে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-“আমি ঠিক আছি গেরোদা, কিন্তু ও ঠিক থাকবেনা, আমার হাতের নখ অনেকটাই দাগ রেখে দেবে ওর বুকের চামড়ায়…”
গৈরিক প্রসঙ্গটাকে একটু হালকা করার জন্য বলল,
-“ও.কে কাম ডাউন…আচ্ছা আমাদের পাড়ায় সবাই তো বলে আমায় কলির কেষ্ট ঠাকুরের মতো দেখতে, এবার দেখে বলতো সত্যি আমায় তেমন লাগছে কিনা…”
এই বলে সে ওই লোকটার বাঁশিটা ঠোঁটের সামনে ধরে একেবারে শ্রীকৃষ্ণের পোসে দাঁড়িয়ে পড়ল। টুসু দেখে অবাক হয়ে বলল,
-“মাই গুডনেস, ওটা তুমি কোথায় পেলে!”
পরের দিনটা একা একা কাটাতে বিরক্তি লাগছিলো টুসুর। তার গেরোদা অবশ্য বলেছিল সবাইকে চোখে চোখে রাখতে, তবে টুসুর তো কাউকে খুব একটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল না। গেরোদা আজ বর্ধমানের গুস্কারায় গিয়েছে, জাহ্নবীর পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলার জন্য। সেই ভোরে বেরিয়েছে, বলেছে যে আসতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। অগত্যা টুসু একটা ইংরেজি থ্রিলার খুলে বসেছে। কে বলবে যে এক মাস পরেই ওর সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা। বিকালের দিকে ফিরে এলো গেরোদা, কেমন যেন গম্ভীর হয়ে থাকছে সারাক্ষণ। বাড়ির প্রায় সবাইকেই আলাদা করে কি সব কথা জিজ্ঞেস করলো সে। টুসু জানে যে এই রকম সময় গেরোদা একাই থাকতে পছন্দ করে, তাই আর তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি সে। তবে সবচেয়ে বেশি সময় গৈরিক কথা বলল কেয়ারটেকার শঙ্করবাবুর সাথে। তাহলে কি এই বয়স্ক মানুষটাকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন গেরোদা? টুসুর মনে হলো তার জেঠতুতো দাদার মনে কখন কি চলছে, তা বোঝা খুব কঠিন। সন্ধ্যার পর গৈরিক টুসুকে বলল,
-“বাড়ির সবাইকে ডেকে দে, কাউকে বাদ দিবিনা, বুঝলি…”
-“সেকি? তুমি কি আজই কেসটা সল্ভ করে ফেলবে নাকি?”
গৈরিক কোনো উত্তর দিলো না, শুধু একটু মুচকি হেসে মোবাইলে একটা নম্বর ডায়াল করে ফোন কানে রেখে বলল, “হ্যালো, পুলিশ স্টেশন…”
নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে উপস্থিত হলো সবাই; অরুণাভ, শঙ্করবাবু, মহাদেব আর সেই পুলিশ অফিসার, তার সাথে দু’জন কনস্টেবলও এসেছে। এমনকি সবাইকে অবাক করে শ্যমসুন্দরও ঢুকলো ঘরে। টুসু অপেক্ষা করছিল কখন গেরোদা ঘরে ঢুকবে। গৈরিক ঘরে ঢুকে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে, অরুনাভর দিকে চেয়ে বলল,
-“তা অরুনাভবাবু, আপনি আপনার এই পৈতৃক ভিটেটা বেচতে চাননি কেন?”
-“বলেছিলাম তো এই বাড়ির প্রতি আমার একটা টান…”
ওকে শেষ করতে না দিয়েই গৈরিক বলল,
-“তো আপনার এই বাড়ির প্রতি টানটা কি জাহ্নবী আসার পর কিঞ্চিৎ বেড়ে গিয়েছিল?”
অরুণাভ অবাক হয়ে গেল এ কথা শুনে, বলল,
-“মানে?”
-“মানেটা খুব সিম্পল, আগে তো আপনি এই বাড়িতে ন’মাসে ছ’মাসে একবার আসতেন, কিন্তু জাহ্নবী আসার পর আপনি প্রতি সপ্তাহেই এক দু’ দিন করে…”
এবার অরুণাভ গৈরিককে থামিয়ে বলল,
-“কারণ আমি বাড়িটাকে রিপেয়ার করার কথা ভাবছিলাম আবার নতুন করে…”
টুসু দেখল যে কেউ যেন কাউকে কথা শেষ করতে দিচ্ছে না, গৈরিক চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
-“জাহ্নবীর থেকে কিন্তু বাড়ির প্রতি আপনার খুব একটা বেশি টান ছিলনা, মিস্টার রায়চৌধুরী, আপনি যে জাহ্নবীর সাথে কতটা ঘনিষ্ট হয়েছিলেন তার সাক্ষী এ বাড়ির সবাই…আর মনে পড়ে, সেই এক ঝড় জলে ভরা রাতের কথা, সেদিন আপনি জাহ্নবীর সাথে…কি শঙ্কর বাবু? তেমনি তো দেখেছিলেন আপনি?”
শঙ্কর বাবু হঠাৎ হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল,
-“আমায় ক্ষমা করুন দাদাবাবু, উনি আমায় এমন ভাবে জেরা করতে লাগলেন যে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল ও কথা, ক্ষমা করুন আমায়, ক্ষমা করুন…”
অরুণাভ এবার মুখ নিচু করে বসে পড়ল সোফায়, গৈরিক বলল,
-“মি: রায়চৌধুরী এখনো কি অস্বীকার করবেন যে জাহ্নবীর গর্ভের সন্তান আপনার নয়…তাহলে কিন্তু আমায় আপনার আর তার সমস্ত কথোপকথনের রেকর্ড বার করতে হবে আপনাদের মোবাইল কোম্পানিগুলো থেকে।”
অরুণাভ মুখ তুলে বলল,
-“তার কোনো দরকার হবে না মিস্টার সেন, আমি মানছি যে ও আমার সন্তানের মা হতে চলেছিল…ও কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না বাচ্চাটাকে এবোর্ট করতে, আমায় ওকে বিয়ে করতে বলছিল…”
-“তাহলে তো এটাও মানতে হয় যে জাহ্নবীর খুনের সময় নিজে কলকাতায় থাকলেও নিজের নাম থেকে কলঙ্ক মুছতে পয়সা দিয়ে লোক লাগিয়ে আপনিই খুন করিয়েছেন ওকে।”
অরুণাভ এবার আতঙ্ক ভরা মুখে বলল,
-“না, না গৈরিক বাবু, আমি মানছি ওর সাথে আমার একটা শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল…তবে আমি ওকে খুন করিনি গৈরিক বাবু, খুন করিনি…আমিও ওকে ভালোবাসতাম, শুধু কিছু ফিন্যান্সিয়াল ইস্যুর জন্য বিয়ে করতে পারছিলাম না, বিশ্বাস করুন আমায়, আবার বলছি, আমি ওকে খুন করিনি।”
টুসুর যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল সব কিছু দেখে শুনে, শেষ পর্যন্ত অরুণাভ, এ তো সে ভাবতেই পারেনি কখনো!
(৫)
গৈরিক এবার হঠাৎ নরম হয়ে গিয়ে বলল,
-“শান্ত হন অরুণাভবাবু, আমি জানি আপনি খুনি নন, আমি শুধু চাইছিলাম যে আপনি যেন জাহ্নবীর গর্ভের সন্তানের পিতৃত্ব নিজের মুখে স্বীকার করেন। তাই এভাবে আপনাকে উত্ত্যক্ত করলাম, মার্জনা করবেন।”
তারপর সে অন্যদের দিকে ঘুরে গিয়ে বলল,
-“যাকগে, কিছুক্ষণ না হয় জাহ্নবীর কথা ছেড়ে, আমি শিউলির প্রসঙ্গে আসি। সে এই বাড়িরই মেয়ে ছিল কিন্তু আপনারা ওর সম্বন্ধে এখনো অনেক কিছুই জানেন না, যা আমি বলতে চলেছি। মাত্র আট বছর বয়সে শিউলিবালার বিবাহ হয়েছিল বাংলাদেশের সাতখিরার এক জমিদারপুত্রের সঙ্গে, নাম নন্দদুলাল সিংহ। বিবাহের সময় নন্দদুলালের বয়স ছিল মাত্র চোদ্দ বছর। মা বাপ মরা মেয়েটির সুখের সংসার কিন্তু বেশিদিন টিকল না। নন্দদুলাল বিপ্লবী দলে যোগ দিয়েছিল, তাই বাড়িতে খুব কম সময়ই থাকতো। একদিন ইংরেজ সেপাইরা সাতখিরায় নিয়ে এলো একটি তরুনের লাশ যার কপালে আর গালের চারপাশে চারটে গুলি লেগেছিল, ফলে তার মুখ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। সবাই তার চেহারা দেখে ভাবল যে সেই হল নন্দদুলাল আর তখনকার প্রথা মেনে হতভাগিনী শিউলিবালাকে বালবিধবার বেশে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল!”
টুসু বলল,
-“বাপরে, তুমি তো পুরো উইকিপিডিয়া হয়ে গেছো গো, এত ইমফো কোথায় পেলে?”
গৈরিক বলল,
-“দাঁড়া, পিকচার তো অভি বাকি হায়…পরে সব বলছি…শিউলি ছিল জমিদার নরনারায়ান রায়চৌধুরীর দাদার মেয়ে। তার মা বাবা তার জন্মের কিছু পরেই গত হয়েছিল। অনাথ মেয়েটির মা বাবা দু’জনের ভূমিকাই পালন করত জমিদারবাড়ির ধাই, কিরণবালা। এই ধাইমা শিউলিকে নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসত, শিউলি তার সমস্ত মনের কথা কিরনবালাকেই সবার আগে বলত যেমন বলেছিল তার বিধবা হওয়ার করুন কাহিনীটি। যেদিন শিউলির ওই সন্ন্যাসীর সাথে শেষ দেখা হয়, সেদিন রাতে সন্ন্যাসীর কাছে যাওয়ার আগে সে কিরণবালাকে বলে যে ওই সন্ন্যাসীই হলো তার হারিয়ে যাওয়া স্বামী নন্দদুলাল! এত বছর পর সে সন্ন্যাসী হয়ে ফিরেছে, মন্দিরে নতুন শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন তাকে আর কেউ চিনতে পারুক না পারুক, কিন্তু একজন স্ত্রীর কখনো তার স্বামীকে চিনতে কোনো ভুল হবে না। ইংরেজ সেপাইদের আনা লাশটি ছিল অন্য কোনো যুবকের। এই মুহূর্তে খুব অর্থকষ্টে আছে তার স্বামী, তাই সেদিন রাতেই শিউলি তার গহনার বাক্স নিয়ে পাড়ি দেয় ওই সন্ন্যাসী, থুড়ি তার স্বামী নন্দদুলালের কাছে!”
টুসুর আর মুখ দিয়ে কোনো কথা বার হচ্ছিল না, অরুণাভ বলল,
-“কিন্তু ওই গহনার বাক্সের কথা তো আমরা কোনো দিন শুনিনি!”
গৈরিক আবার বলতে লাগল,
-“কারণ জমিদারের লেঠেলদের হাতে ধরা পড়ার আগেই ওই মন্দিরের কোনো একটা জায়গায় সেটা লুকিয়ে রেখেছিল ওরা দু’জনে।”
কিছুক্ষণ পর শ্যামসুন্দর মুখ খুলল,
-“পর আপকো ইতনা সব ক্যাইসে মালুম হুয়া?”
গৈরিক শুরু করল,
-“এইবার আসি এই প্রশ্নের উত্তরে। জাহ্নবীর বাড়ি গিয়ে ওর পরিবারের সাথে কথা বলে আমি জানতে পারি যে এই কিরণবলা হলো ওদের বংশেরই এক নারী। কিরণবালা নিজেও বাঁশি বাজাতে জানত, আর এটাও জানত যে নরনারায়ান একজন হার্টের রুগী। তাহলে এবার আর বলার দরকার নেই যে ওই সন্ন্যাসীর মৃত্যুর পর কিরণবালাই ভূত সেজে মাঝরাতে বাঁশি বাজাত ওই জঙ্গলে। সে চেয়েছিল, নরনারায়ান যে অন্যায় কাজ করেছেন তার কন্যাসম শিউলির প্রতি, তার প্রতিশোধ নিতে। আর সফলও হল সে, ভূতের ভয়ে দুর্বল হৃদয়ের নরনারায়ান বেঘোরে প্রাণ হারালেন। এরপর কিরণবালা ওই গ্রাম ছেড়ে তার নিজের বাড়ি বর্ধমানে চলে যায়। আর তার বংশের সকলেই বংশপরাক্রমে শিউলি সম্পর্কিত সমস্ত ঘটনা জানতে পারে তার কাছ থেকে, আর এই ভাবেই ওই গহনার বাক্সের কথা জানতে পারে জাহ্নবী। কিন্তু হায়, এই জানাটাই তার জীবনের কাল হয়ে গেল।”
অরুণাভ চেঁচিয়ে উঠলো,
-“আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছি না মিস্টার সেন, আপনি বলুন কে খুন করেছে জাহ্নবীকে, বলুন, আপনি বলুন প্লিজ…”
গৈরিক বলেই চলল,
-“জাহ্নবীর এই বাড়িতে আসার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল ওই গহনার বাক্সটা হাতানো, কিন্তু এরই মধ্যে সে অরুণাভর প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে। সে ভাবে যে গহনাগুলো পেলে অরুণাভর সাথে ভালো ভাবে জীবন শুরু করতে পারবে, তাই তো সে তার গর্ভের সন্তানকে এবোর্ট করেনি। তবে ওই গভীর জঙ্গলে গিয়ে রাত বিরেতে গহনার বাক্স খোঁজা, তাও আবার একা একা, সেটা একটা মেয়ের পক্ষে সত্যি কঠিন। এদিকে অরুণাভ তো কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকে, তাই সে সাহায্য চেয়েছিল এমন একজন জোয়ান পুরুষমানুষের কাছ থেকে যে সর্বক্ষণ এই বাড়িতেই থাকে। বলেছিল যে ওটা পাওয়া গেলে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।”
আর কারোর বুঝতে বাকি রইল না যে গৈরিক কার কথা বলছে। সকলের ক্রুর দৃষ্টি নিজের দিকে আঁচ করে আছে বুঝতে পেরেই মহাদেব চেঁচিয়ে বলে উঠল,
-“না, আ…আমি কিছু জানি না, আমি কিছু করিনি…”
এতক্ষণ পর টুসু মৃদু হেসে বলল,
-“আমি কিন্তু কাল রাতে নখ দিয়ে খামচে অপরাধীর বুকের ছালচামড়া তুলে নিয়েছি!”
কথা শেষ না হতেই অরুণাভ ছুটে গেল মহাদেবের দিকে, আর এক টানে ওর জামার সব কটা বোতাম ছিঁড়ে ফেলল। সবাই দেখল যে তার বুকে টুসুর নখের ক্ষত এখনো জ্বলজ্বল করছে!
গৈরিক বলল,
-“কথায় আছে না অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। জাহ্নবীর সাথে মহাদেব কয়েকমাস ধরে খোঁজাখুজির পর মন্দির থেকে বার করে ফেলে গহনার বাক্স। এই কয়েকমাসে জাহ্নবীরই কথামতো মাঝরাতে মন্দিরে এসে বাঁশি বাজাতে থাকে মহাদেব, আর জাহ্নবী খোঁজ চালিয়ে যায় গহনার বাক্সের। ওরা জানত যে এতে গ্রামের সকলে ভাববে যে আবার বোধহয় ওই সন্ন্যাসীর ভূতের আবির্ভাব হয়েছে, ফলে ভুলেও কেউ জঙ্গলের কাছে সেইসময় আসবে না। ও ভেবেছিল আমরাও বোধহয় কাল রাতে ওর বাঁশি বাজানো শুনে ভয়ে আজ সকালেই মানে মানে কেটে পরব। ছোটবেলায় মহাদেব স্কুল পালিয়ে মাউথ-অর্গান বাজিয়ে বেড়াতো, এ কথা তার বাবা আমাকে বলেছে, তাই তার পক্ষে বাঁশি বাজানো খুব একটা কঠিন নয়…এছাড়া ওই বাঁশিটা ও গ্রামের যে দোকান থেকে কিনেছে, সেই দোকানদার ওর চেহারার বর্ণনা আমার কাছ থেকে শুনে ওকে চিনতে পেরেছে। যেদিন ওরা গহনার বাক্সের খোঁজ পেয়ে যায়, সে দিন মহাদেবের মনে সমস্ত গহনা একাই আত্মসাৎ করার ফন্দি আসে, আর তাই সে জাহ্নবীর মাথায় পাথর ছুঁড়ে…”
গৈরিকের কথা শেষ না হতেই অরুণাভ মহাদেবের কলার চেপে ধরে তাকে এক থাপ্পড় মারতে উদ্যত হলো, কিন্তু পুলিশ কনস্টেবলরা ছুটে এসে ওদের থামিয়ে দিল। মহাদেব আর কোনো কথা বলল না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকল তার বৃদ্ধ বাবা শঙ্কর।
টুসু বলে উঠল,
-“এবার বুঝেছি…ওই পাগলটা হয়তো ওদের মন্দিরে কিছু খোঁজাখুঁজি করতে দেখে ফেলেছিল, তাই সেদিন বলছিল তোরা গুপ্তধন পাবিনা। আর এই কথা বুঝে মহাদেব ওকেও রাস্তা থেকে সরিয়ে দিল গলা টিপে খুন করে, যাতে ও কাউকে কিছু বলতে না পারে!”
গৈরিক বলল,
-“দ্যাটস রাইট টুসু, আর যদি আমাদের পুলিশ বাবুরা এখন ওই রক্তমাখা পাথর বা ওই পাগলটার গলার স্কিনে একটু খুঁজে দেখেন, তাহলে মহাদেবের ফিঙ্গারপ্রিন্ট অবশ্যই পাবেন!”
সেই দীর্ঘদেহী পুলিশ অফিসার এবার বলে উঠল,
-“হ্যাটস অফ টু ইউ, গৈরিকবাবু, আপনি তো ফাটিয়ে দিলেন মশাই। তবে ওই গহনার বাক্স…”
-“ওটা মন্দিরেই রাখা আছে…পাছে কিছু জানাজানি হয়ে যায় তাই মহাদেব ওটাকে আর ঘরে আনেনি, সুযোগ পেলে ওখান থেকেই ওটা নিয়ে সোজা কলকাতা চলে যেত বেচার তাগিদে। এখন প্রশ্ন মন্দিরে কোথায় আছে ওটা? তাইতো?”
সবাই প্রায় একসাথেই বলে উঠল, “হ্যাঁ।”
গৈরিক বলতে লাগল,
-“মনে আছে আমি বলেছিলাম যে শিউলি কিরণবালাকে বলেছিল যে ওই সন্ন্যাসীই মন্দিরে নতুন শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছে…আমার বিশ্বাস ওই শিবলিঙ্গটা ফাঁপা…ওর মধ্যেই লুকোনো আছে গহনার বক্সটি, কি মহাদেব বাবু, আমি ঠিক বলেছি তো?”
মহাদেব মুখ নিচু করেই মাথা দুলিয়ে একটা সম্মতিসূচক ঈঙ্গিত করল।
সেই রাত্রেই মহাদেবকে এরেস্ট করে নিয়ে গেল পুলিশ আর মন্দির থেকে গহনার বাক্সে যা সোনা পাওয়া গেলো, তার এখনকার মুল্য আনুমানিক কুড়ি লাখ টাকা!
গেরোদার এত বড় সাফল্যের পরও টুসুর মন কেমন করছিল শিউলি আর জাহ্নবীর কথা ভেবে। কত মিল এদের দু’জনের মধ্যে। এই দু’জন নারীই তাদের ভালোবাসার মানুষদের সাথে সংসার করতে চেয়েছিল, চেয়েছিল যেভাবেই হোক তাদের আর্থিক সাহায্য করতে। কিন্তু দু’জনের ভাগ্যে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু জুটল না। সত্যিই তো, সেই যুগ থেকে এইযুগ অবধি মেয়েরা কত অসহায় সমাজের হাতে। টুসু নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল, কবে যে মেয়েরা উপযুক্ত মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে, কবে যে তারা পুরুষের চোখে চোখ রেখে বলতে পারবে, আমিও তোমার মতই মানুষ ! কবে?